paramchetanar-pothe-bisleson-sandip-dutta

‘রক্তকরবী’র সমস‍্যা নিয়ে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ১৩৩২ বঙ্গাব্দে ‘প্রবাসী’পত্রিকার বৈশাখ সংখ‍্যায় লিখেছিলেন,”আধুনিক সমস‍্যা বলে কোনো পদার্থ নেই,মানুষের সব গুরুতর সমস‍্যাই চিরকালের।”
বিদেশে যখন’modernism’ এবং ‘modernity’ শব্দদুটো নিয়ে নিরন্তর চর্চা চলে,আমাদের সাহিত‍্য শিল্পকলার আঙ্গিনাতে তার ছটা এসে লাগবে,এটাই তো স্বাভাবিক। চিত্রকল্প আর চেতনা তাই আধুনিক সাহিত‍্যের অন‍্যতম ধারক হল। ‘অন্ধকার’কবিতায় জীবনানন্দ লিখেছিলেন,’হৃদয়ের অবিরল অন্ধকারের ভিতর সূর্যকে ডুবিয়ে ফেলে/আবার ঘুমোতে চেয়েছি আমি,/অন্ধকারের স্তনের ভিতর যোনির ভিতর অনন্ত মৃত‍্যুর মতো মিশে/থাকতে চেয়েছি।’
এই পংক্তিগুলোর বিশ্লেষণে আমরা যে অতলে পৌঁছবার প্রয়াস করতে পারি,সেখানে অনুভব চেতনা ছাড়িয়ে মিশে যাবে পরমচেতনায়। ‘আধুনিক’শব্দটা কালের নিয়মে যতই ‘অত‍্যাধুনিকতা’র দিকে এগিয়েছে,সরলভাষার কবিতা হয়েছে ভাবের দিক দিয়ে গভীর থেকে গভীরতর। অনুভব আর অবচেতন কখনও কখনও রূপান্তরিত হয়েছে পরমচেতনায়। অরুণ দাসের সাম্প্রতিক গ্রন্থ ‘পরমচেতনার পথে কবিতা’র মধ‍্যে তারই দৃষ্টান্ত রয়েছে। গ্রন্থটির একেবারে গোড়ার দিকে কবি অরুণ দাস বলেছেন,”পরমচেতনাকে উপলব্ধি করতে গেলে ইন্দ্রিয়জ্ঞান একটি জরুরী বিষয়।”সঠিক কথাই। আমাদের মেধা,মন থেকে মনন,আমাদের চিত্ত যদি সে গভীরতার অতলে অবগাহন করে,তাহলে উপলব্ধির পৃথিবী আরও নব থেকে নবতর হয়। অরুণের কথায়,”আমরা কীভাবে,কতক্ষণ,কতটুকু কোনো অনুভূতি পাবো তার নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্ক।” পরমচেতনাকে অনুভব করবার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন অরুণ। সংবেদনশীল প্রয়োগে তিনি বলেছেন,”আর জন্মানো না বলেই/চিনে নিই/বুনো গন্ধে ম-ম মৃত্যু/সুগন্ধী শরীরের প্রতিটি বাঁকে।” ইন্দ্রিয়জ বা ইন্দ্রিয়াতীত এক অলৌকিক আনন্দের সঞ্চার করে এই পংক্তিগুলো।
পরমচেতনা যে অনুভূতিবোধ সৃষ্টি করে,সেখানেই সৌন্দর্য। মননে কাব‍্যকায়া বা বর্ণব্রহ্মান্ডকে উপলব্ধি করা যায়। অরুণের কথা ধরেই বলা যায়,Z প্রজন্মের কবিতার মধ‍্যে পরমচেতনাকে ছোঁয়ার জন‍্য বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের সক্রিয়তা বৃদ্ধি ও সুনিয়ন্ত্রণ ভীষণ জরুরি। তবেই কবিতার পথ ও দর্শন আরও নানাভাবে বিকশিত হবে।
মেদিনীপুরের শ্রীলিপি প্রকাশনা থেকে সুতপা চক্রবর্তী কর্তৃক প্রকাশিত অরুণ দাস রচিত এই গ্রন্থটি ধীসম্পন্ন পাঠকদের আকৃষ্ট করবে,সে ব‍্যাপারে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।

………………

পরমচেতনার পথে কবিতা/অরুণ দাস
শ্রীলিপি প্রকাশনা
প্রকাশক সুতপা চক্রবর্তী
পশ্চিম মেদিনীপুর
মূল‍্য ১০০ টাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *