কবি লেখক শ্রী অরুণ দাসের লেখা ‘পরমচেতনার পথে কবিতা’ বইটি হাতে এসেছে।
আমি জানি না,হয়ত, আমার মতের সাথে অন্য কারোর মত না-ও মিলতে পারে, তবে সেটা যাই হোক, কয়েকটি কথা বলতেই হবে, যা আমার নিজস্ব মনে ধারণা হয়েছে বইটির সম্বন্ধে।
বইটির উদ্দেশ্য z- প্রজন্মের কবিদের, পরমচেতনা সম্বন্ধে কিছু তথ্য অবগত করানো, যাতে তারা কবিতাকে আরও এক উন্নত দিশায় নিয়ে যেতে পারে।উদ্দেশ্য খুবই মহৎ।এতে সেই পথের দিশা, এবং সেই পথের সম্বন্ধে কিছু জ্ঞান অর্জনের তথ্য জানানো হয়েছে। বইটি পড়েই বোঝা যায়, কবি, লেখক শ্রী অরুণ দাস যথেষ্ট পরিশ্রম করে স্বল্প পরিসরের মধ্যে এক বিশাল দার্শনিক তথ্যকে ক্যাপসুলের আকারে আনার চেষ্টা করেছেন সহজবোধ্য করে।এটা নিঃসন্দেহে নতুন প্রজন্মের কবিদের বা পাঠকদের কবিতা লিখতে, বুঝতে বা সে ভাবরাজ্যের অন্তর্লোকে পৌঁছানোর পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করবে।
তবে আমার নিজস্ব কয়েকটি কথা বলি, যা এই বই পড়তে পড়তে মনে হয়েছে। আগে বলি, সর্বসাধারণের জন্য, যে, জেড প্রজন্ম বলতে আমরা কি বুঝি।
আভিধানিক অর্থে, এরা সেই তরুণ প্রজন্ম বা ১৯৯০ সালের পর যাদের জন্ম, সেই ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েরা, যারা মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদিকে দৈনিক জীবনের অঙ্গ করেই জীবন শুরু করেছে। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত বয়স্ক বা আরও পুরানো দিনের মানুষদের সাথে এই প্রজন্মের একটা ভেদাভেদের সীমারেখার লাইন টানতে এই শব্দবন্ধের জন্ম।
তরুণতম কবিদের জন্যই মুখ্যতঃ এই লেখা বা বইয়ের অবতারণা।
আমার ধারণায়, সমস্ত শিল্পই এক একটি কবিতা। হতে পারে সেটি তুলি দিয়ে বা ছেনি- বাটালি দিয়ে কিংবা নৃত্যের দেহসৌষ্ঠব ভঙ্গিমায় কিংবা লেখার অক্ষর, বর্ণসমন্বয়ে।
অর্থাৎ ,যে শিল্পীর যেটি প্রকাশ মাধ্যম, তাই দিয়ে অন্তরের অন্তরতম মাধুরী দিয়ে যা ফুটিয়ে তুলতে চান, সেটির সৌন্দর্যই আমাকে কবিতার ইঙ্গিত দেয়।
সেইভাবে, আমার বিচারে একটি সুন্দর আলপনা বা একটি সুন্দর ভাস্কর্যও আমার চোখে কবিতা হয়ে ফুটে ওঠে।
আবার ঈশ্বরের সৃষ্টিতে বা প্রকৃতির রূপকল্পে যা সৃষ্টি হয় তা-ও বহুলাংশেই আমার কাছে কবিতা হিসাবে প্রতিভাত হয়।যেমন অস্তসুর্যের নানা রঙের আঁকিবুঁকি সাদা মেঘের উপর, গাছের নীচে আলো ছায়ার আলপনা, কি ফুলে ফুলে রঙিন ক্যানভাসের চালচিত্র এ সবই আমার কাছে কবিতা।আবার, চলমান জীবনের সুখ দুঃখ, মিলন বিরহ বেদনা আনন্দ সবই এক মহাবিশ্বের বিশাল কবিতা বা শিল্পের প্রকাশ।
এখন প্রশ্ন, এর প্রতিটি সৃষ্টিই, যখন শিল্পী সৃষ্টি করেন, তিনি কি পরমচেতনার আস্বাদ না করে সুন্দরের দেবতার অনুগ্রহ লাভ না করে, তাঁর আরাধনা না করে এই সৃষ্টি করতে পারেন?
আমার মনে হয়, না।
নিজেকে সেই সাধনায় নিমগ্ন না করে নিজের অন্তর্লোকে সেই পরম সুন্দরের অনুভব না করে, জগৎ-সংসারের সমস্ত কিছুর ঊর্ধে না গিয়ে কেউ কি মহৎ সৃষ্টি করতে পারেন?
কাজেই এই অনুভব, এই সাধনা, যা শ্রী অরুণ দাস নতুন প্রজন্মের, কেবলমাত্র কবিদের জন্য, বলেছেন, তা আমার মতে কেবলমাত্র কবিদের জন্য নয় সমস্ত শিল্পী, যাঁরা শিল্প সাধনাতেই নিমগ্ন প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সমান ভাবে প্রযোজ্য।
এবার বলি, এই পরমচেতনার অনুভব বা সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে সেই অভীষ্ট পরমকে প্রাপ্তির প্রচেষ্টা, সেটা কি কেবল তরুণ জেড প্রজন্মের জন্যই প্রযোজ্য? এটা কি চিরকালীন নয়?
তাহলে, যে বাউলসাধকরা দেহতত্বের মধ্যে দিয়ে তাঁদের পরম প্রার্থিতকে পাওয়ার সাধনা করে চলেছেন সুদীর্ঘ দিন ধরে, সেটি কি? তাঁরাও তো বিভিন্ন, অনেক সাধারণ শব্দের মধ্যে দিয়ে অনেক কঠিন গূঢ় তত্বের প্রকাশ করতে চান, সে কি অনুভব না করে? রবীন্দ্রনাথের কবিতা বা গানে যে ব্রহ্মের বা সুন্দরের ধ্যান করা হয়েছে সে কি এই সমস্ত অনুভব ব্যতীত হয়েছে? তিনিও বহু শব্দ ব্যবহার করেছেন, সৃষ্টি করেছেন, বহু সুর তাল সৃষ্টি করেছেন, নিজের অনুভূতিকে প্রকাশের জন্য, সেগুলি কি এই সমস্ত ছাড়া কিছু হতে পারে?
আর নতুন শব্দসৃষ্টি বা উপমা যা আজকাল অনেক তরুণ কবিই করছেন, তার প্রচেষ্টা বা ব্যবহার কি আগের যুগের কবিরা করেন নি? তাহলে ‘’ পাখীর নীড়ের মত চোখ” কি?
জীবনানন্দ, সুধীন্দ্রনাথ বা অলোকরঞ্জন নিশ্চয়ই জেড প্রজন্মের নন, তাহলে কি এই সমস্ত অনুভূতি তাঁদের ছিল না! আমার মতে, নিশ্চয়ই ছিল। যাঁরাই শিল্পসাধনা করেছেন বা করছেন, তাঁদেরই দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ সাধারণের থেকে আলাদা হবেই বা হতেই হবে।না হলে তিনি শিল্পীই নন।
আমি এক শিল্পীর কাছে শুনেছিলাম, তিনি বলছেন, তাঁর এক শিশু ছাত্র আকাশের রঙ ঘন সবুজ করে এঁকে তাঁকে দেখিয়েছিল।তিনি বললেন, এ কি, আকাশকে সবুজ করলে কেন? সে বলেছিল, আমার মনে হল, আকাশটা সবুজ হলেই বোধ হয় ভাল হয়।শিল্পীটি বুঝলেন, তার চোখ এবং মন আছে।তাকে এই ধারণা পাল্টানো উচিত হবে না।শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় বলতেন, বাবা, আমি কাউকে আঁকা শেখাতে পারব না। তোমার ভিতরে আঁকা থাকলে তাকে একটু ঠিক করে দিতে পারব।
নন্দলাল বসুর কাছে ছবি আঁকা আর প্রার্থনা ছিল একই।তিনি ছবি আঁকতে বসলে ধূপ জ্বেলে, ফুল দিয়ে তবে আঁকতে বসতেন।তা, এ তো সাধনা।
আমরা মাইকেল এঞ্জেলো বা রঁদ্যা কি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি যাঁর কথাই ভাবি না কেন সবাই এই সাধনাই করেছেন। কাজেই কোন মহৎ সৃষ্টিই এই সাধনা ছাড়া কোন দিন হয়ই নি, হবেও না।
কাজেই আমার বক্তব্য, এই সাধনা, কেবল আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য নয়, চিরকালই ছিল এবং থাকবে।না হলে মহৎ শিল্পই হবে না।
আর একটি কথা।আমারও মনে হয়, শিল্পী কখনও তৈরী করা যায় না। যার মধ্যে কোন শিল্পের বোধ নেই, তার পক্ষে শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়। যার কোন সুর তাল লয় বোধ নেই, সে কি বই পড়ে সঙ্গীতশিল্পী হতে পারে? যার চোখে রঙের সৌন্দর্য ধরা পড়ে না, সে কি চিত্রশিল্পী হবে হাজার চেষ্টা করলেও? আসলে এই বোধটাই ঈশ্বরের দান, যেটি সহজাত না থাকলে, হাজার চেষ্টাতেও কোন অঙ্কুরও জন্মাবে না।
এবার বলি, বড় শিল্পী হওয়ার জন্য পড়াশোনা নিশ্চয়ই প্রয়োজন।তবে এটাই যে একান্ত প্রয়োজনীয় এমনটি নয়। তাহলে আর হলধর নাগ এত বড় কবি হতেন না বা লালন সাঁই কি ভবা পাগলা এত গান লিখতে পারতেন না। বাবা আলাউদ্দিন খানই বা কি এত বড় শিল্পী হতে পারতেন।তবে পড়াশোনায় শিল্পের উৎকর্ষতা অবশ্যই সাধন হয় এটা অনস্বীকার্য। তাই মার্গারেট নোবেল বা ভগিনী নিবেদিতা, শিল্পী নন্দলালকে বলেছিলেন, ভারতের দেবদেবী বা রামায়ণ মহাভারত থেকে ছবি আঁকতে চাইলে, সেগুলো ভাল করে পড়া উচিত।
এবার বলি, এই তরুণ প্রজন্ম কি করছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই কবিতা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন, ফর্ম ভাঙার চেষ্টা করছেন, নতুন কিছু করার কথা ভাবছেন।কিন্তু সে-ও কি নতুন ব্যাপার? এ- ও তো যুগে যুগেই হয়েছে, হয়ে চলছে, চলবেও আগামী যুগ যুগ ধরে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই নিজেকে ক্রমশঃ ভেঙেছেন, নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। মাইকেল মধুসূদন তাঁর আগের প্রচলিত বৃত্ত থেকে বেরোনোর জন্য বিদ্রোহ করেছেন। রবীন্দ্র পরবর্তীরা, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দরা রবীন্দ্র বৃত্ত থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেছেন। আবার তার পরবর্তী যুগে হাংরি জেনারেশনের কবি, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়রা নতুন কিছু করতে চেষ্টা করেছেন।
সত্তরের দশকে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। সমস্ত তরুণ প্রজন্ম কবিতা, লিটল ম্যাগাজিন, অণুগল্প, অণু পরমাণু কবিতা নিয়ে মেতেছিলেন। যাঁর যেমন ক্ষমতা তিনি সেই ভাবে লেখা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন।আমি তখন একটি অণু পত্রিকা দেখেছিলাম, যার আয়তন ছিল ১.৫” x ২”। ভিতরের লেখা গল্প, কবিতার আয়তনও সেই অনুপাতেই।
তখন বইমেলা মানেই, খদ্দরের পাজামা পাঞ্জাবী, কাঁধে সাইডব্যাগ, উষ্কোখুষ্কো চুল, আর হাতে নিজের লেখা বা সমকালীন উঠতি কবিদের লেখা ছোট ছোট পত্রিকার গোছা নিয়ে ধূলিধুসরিত বেশে ফেরি করা যুবক কবিদের দেখা যেত। সমকালীন অনেক সাহিত্যে তাঁদের উল্লেখ আছে। মনে আছে, আমি একবার, সেই সময় শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা থেকে ফেরার সময়, ( তখন পৌষমেলা, বসন্ত উৎসব সব হত)ট্রেনে এরকমই এক কবি আমাকে দেখিয়েছিলেন, তৎকালীন যুগের নতুন ধারণা হিসাবে, তাঁর কবিতার বই। এতে তিনি চেষ্টা করছিলেন সমস্ত যতিচিহ্নের ব্যবহার তুলে দিয়ে কবিতা লিখতে। আমাকে বললেন, আমার কি মত এতে।
আবার এক বিদেশী কবির কবিতায় দেখেছিলাম, তিনি কবিতার মধ্যে falling leaves লিখেছেন, প্রতিটি অক্ষরকে গাছ থেকে পাতা পড়ার মত করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাজিয়ে।এইভাবেই তিনি পাতার পতনকে ছবি করে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁর কবিতায়।
এ সবই তো কবিতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা। কোনটা পাঠক গ্রহণ করবে, যুগ গ্রহণ করবে, সেটা বলা সম্ভব নয়।
মাইকেল মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর অনেকে চেষ্টা করেও সার্থক ভাবে কেউই লিখতে পারেন নি, এমনকি রবীন্দ্রনাথও নয়।
জীবনানন্দ তাঁর কবিতা নিয়ে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন।সমকালে বহু মানুষ তাঁকে বুঝতেই পারে নি।
বিষ্ণু দে বা অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য।
আবার ওদিকে পিকাসো, ভ্যান গগের মত শিল্পীরা কখনই পুরানো ফর্মে বাঁধা থাকেন নি, অমূর্তকে মনের ভাব মিশিয়ে প্রকাশের চেষ্টা করেছেন।
এক ছবির প্রদর্শনীতে দেখেছি৷ বিরাট এক সাদা ক্যানভাসের মধ্যে একটি কালো আঁচড় দিয়ে শিল্পী দুঃখ বোঝাতে চেয়েছিলেন।
সে যাই হোক, প্রতি যুগই মনে করছে, তারা আগের যুগের থেকে অনেক এগিয়ে, নতুন কিছু করতে চায়।এটাই স্বাভাবিক।এটাই মানুষের প্রগতির লক্ষণ। তবে যে সময় চলে, সে সময়টাই আধুনিক, আবার পরমুহুর্তেই তা প্রাচীন।” এ খেলা চলছে নিরন্তর”।
এতক্ষণ আমার কথা বললাম। তবে কথা যা বলেছি, সবটাই বইটির অনুসঙ্গে।
এবার সোজাসুজি চলে যাই বইটির কথায়।
বইটির ছাপা একেবারে ঝকঝকে। অক্ষর বিন্যাস ও সুন্দর। শুধু দু একটি বানান ভুল ছাড়া বিশেষ কিছু চোখে পড়ে নি।তবে আমি জানি না, বইয়ের পাতাগুলো ফাঁকা রাখা হয়েছে কেন।কোন কোন পাতায় একটি দেড়টি বা দু- তিনটি লাইন ছাপা হয়েছে।আবার কোন পাতা সম্পূর্ণই ফাঁকা।এটার পিছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে, যেটি আমার বোধগম্য হয় নি।
লেখক এই বইতে কিন্তু একেবারে সরল করে, শুরু থেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন পরমচেতনা কি, বা এটি বলতে তিনি কি বোঝাতে চাইছেন। পঞ্চভূত কি, তাদের গুণাগুণ, তাদের সাথে আমাদের শরীরের অন্তর্নিহিত যোগাযোগ ইত্যাদি সুন্দর বর্ণনা করেছেন।
শুধু তাই নয়, কবিতার ফর্মের পরিবর্তন বা নতুন ফর্ম সৃষ্টি, দৃষ্টিকোণের ভিন্নতা ইত্যাদি, যাঁরা তরুণ বা এ সম্বন্ধে ধারণা নেই, তাঁদের এই ধারণা দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট উপযোগী হবে বলে বোধ হয়।এই সমস্ত কিভাবে করা সম্ভব সেগুলোও মমতা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
তবে আমার মনে হয়, দু একটি উদাহরণ দিয়ে ১৬ পাতায় লেখা “ দৃষ্টি ও ঘ্রাণের অনুভূতিকে শ্রবণে রূপান্তরিত করা যায়” বা “ কম্পন ও স্পন্দনের গতিময় অদৃশ্য রূপ শ্রবণেন্দ্রিয়ে ধরা যায়।” এই সমস্ত গুলির ব্যাখ্যা দিলে সাধারণ পাঠকের সুবিধা হত বা যাঁর পক্ষে শুধু এই কথায় বুঝতে অসুবিধা হয়, তাঁর পক্ষে সুবিধা হত।
যদিও ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে সঙ্গে, তবু এই উদাহরণ আরও প্রাঞ্জল করা যেত বলে মনে হয়।
যেমন, আমি বলতে চাইছি, ইলিশ রান্নার ঘ্রাণ থেকে তো আমরা মনে মনে ইলিশের স্বাদ, কেমন দেখতে, তার একটা ছবি তো পাই বা অনুভব করি।তাহলে ঘ্রাণ থেকে স্বাদ বা দর্শনের অনুভূতি হল।
এই ধরণের বাস্তব ধারণা।
খুব ভাল কথা বলেছেন লেখক, যে, ‘একমাত্র মনের সাহায্যেই বস্তুর বিশেষ আকারের বোধ জন্মায়।’
আমিও সেই কথাটাই বলছি, মন যদি না তৈরী থাকে কোন কবিতা বা শিল্পই জন্মাবে না।শিল্পীকে এজন্য মন তৈরী করতে হয়।অবশ্য মন না তৈরী বা পরিশীলিত হলে, তা কোন কাজেই বা লাগে!
লেখক বলেছেন, পরমচেতনার অনুভবে “দৃষ্টিকোণের ভূমিকা অপরিসীম”।আমরা দেখি, যেখানে কবি বলেন, “তুমি দেখ নারী পুরুষ, আমি দেখি শুধুই মানুষ”, বা রামকৃষ্ণদেব যে সকলকেই নিষ্কাম চোখে এক দেখতেন, কিংবা মৃন্ময়ীর মধ্যে চিন্ময়ী রূপ দেখতেন, শ্রীরাধা তমাল বৃক্ষকে কৃষ্ণ জ্ঞান করতেন ইত্যাদি সমস্তই তো পরমচেতনার অনুভবে দৃষ্টিকোণের পরিবর্তন, নয় কি!
তবে বইটি তরুণ কবি, যাঁদের মধ্যে এখনও এই চেতনা আসে নি, তাঁদের কাছে একটি, এই অন্তর্লোকের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করবে এটি বলা যায়।
শেষে, আবার পুরানো কথার পুনরাবৃত্তি করে বলি, এই ধারণা শুধু কবিতায় নয় সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়। কাজেই কেবল কবি বা কবিতা নয়, যে কোন শিল্প বা তার শিল্পীর সম্বন্ধেই এই কথা বলা যায়।
সুতরাং, বইটি কেবল জেড প্রজন্মের কবি নয়, সমস্ত শিল্ল বা শিল্পীর ক্ষেত্রেই, এটি প্রযোজ্য বলে মনে হয়।
মলয় সরকার। কবি, লেখক।